ধানে চিটা হওয়ার কারন ও তার প্রতিকার

ধানে চিটা হওয়ার কারন ও তার প্রতিকার

বিজয় কৃষ্ণ হালদার

উপজেলা কৃষি অফিসার, জকিগঞ্জ, সিলেট।

অাইডি নং-১৯৬৭

মোবাইল নং- ০১৯২৩-১৮৬৫২০


ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে অাউস,আমন ও বোরো এই তিনটি মৌসুমেই ধান চাষ হয়ে থাকে। ধান চাষের এই তিন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৫৮ লাখ মেঃটন চাউল উৎপাদিত হয়ে থাকে। শুধু মাত্র ধানে চিটা হওয়ার পরিমাণ কমিয়ে এই উৎপাদন আরও অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। সাভাবিকভাবে ধানে ১৫-২০% চিটা হয়ে থাকে। তবে এর পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কিছু কিছু মাইক্রোনিট্রিয়েন্টের ঘাটতি হলে অনেকটা বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ১৬.৪৮ মিলিয়ন জন সংখ্যা  (July 11,2017 based on the latest united  Nation estimates, Birth rate 2.19%) জন্য প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন খাদ্য চাহিদা  পূরণ করার পরেও খাদ্য উদ্বৃত্ত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা থাকে। যদি ধানে চিটার পরিমান কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায়।

ধানে চিটা হওয়ার কারন ঃ

 ১) ধানের  কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমের কবলে পড়লে অর্থাৎ রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেঃ এর নীচে এবং দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেঃ এর উপরে হলে ধানে অতিরিক্ত চিটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২) কাইচ থোড় অবস্থায় কোন কারনে বাধাগ্রস্থ হলে বা স্ত্রী ও পুরুষ ফুলের মধ্যে পরাগায়ন না হলে।

৩) ফুল অাসা অবস্থায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় (অতিবর্ষন,অতিখরা,প্রবল বায়ূ প্রবাহ বা প্রচন্ড ঠান্ডা)

৪) মাটিতে সুষম সারের অভাব বিশেষ করে জিপসাম,দস্তা ও বোরনের অভাব হলে ধানে চিটা হয়ে থাকে।  ২০০০ সালে অান্তর্জাতিক ধান গভেষণা ইনস্টিটিউট (IRRI) এর Nutritional Disorders and Nutrition Management in Rice শিরোনামে গভেষণায় দেখা যায় ধানের কিছু বায়োকেমিক্যাল প্রসেস যেমনঃ ক্লোরোফিল উৎপাদন, এনজাইমের সক্রিয়তা  এবং মেমব্রেন  ইন্টিগ্রিটির জন্য দস্তা অপরিহার্য।  ঐ গবেষণায় আরো দেখা গেছে দস্তার অভাবে কুশি কমে যায়, এমন কি তা পুরোপুরি  বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে দস্তার অভাবে ধানের স্পাইকলেট স্টেরিলিটি (ধানের চিটা) ও বৃদ্ধি পায়।

১৯৮৭ সালে দুই ভারতীয় বিজ্ঞানী আর কে দত্ত ও এম এল রহমান তাদের "Yield and flowering of rice in relation to fertilizer zine sulphate" শিরোনামে এক গভেষণায় প্রায় একই রকম মত প্রকাশ করেন।

৫) সীথ ব্লাইট নামক রোগের প্রাদুর্ভাব।

৬) কাইচ থোড় থেকে ফুলফোটা পর্যায়ে পানির অভাব হলে।

প্রতিকারঃ

 ১) সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপন বিশেষ করে বোরো মৌসুমে সল্প জীবনকাল  সম্পন্ন জাতগুলো নভেম্বরের শেষের দিকে ( ১৫ই নভেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর) বীজতলায় বীজ ফেলতে হবে এবং ৩০শে ডিসেম্বর থেকে ১০ই জানুয়ারীর মধ্যে রোপন করতে হবে। দীর্ঘ জীবনকাল সম্পন্ন জাতগুলো নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ  থেকে ( ৫- ২৫শে নভেম্বর) বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে এবং ২০শে ডিসেম্বর থেকে ১০ই জানুয়ারীর মধ্যে রোপন করতে হবে। বোরোতে ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা, আউশে ২০-২৫দিন বয়সের চারা এবং আমনে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে।

২)  ফটো সেনসেটিভ জাতগুলো পরিহার করে ফটো ইনসেনসেটিভ জাতের চাষ বাড়াতে হবে।

৩) সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে জিপসাম, দস্তা ও বোরন সার ব্যাবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে লিবরেল দস্তা ও লিবরেল বোরন সার ব্যবহার  করা উত্তম।

৪) কার্যকরী অাগাছা দমনঃ বোরোতে চারা লাগানোর ৪০-৫০ দিন এবং আউশ ও আমনে ৩০-৪০ দিন পর আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫) কাইচ থোড় থেকে দানা বাঁধা পর্যন্ত মাঠে পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬) পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমনে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।


উপরোক্ত ব্যবস্থাদির সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে ধানের চিটার পরিমান অনেকাংশে কমিয়ে জাতীয় উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে বৃদ্ধি করা সম্ভব।